প্রযুক্তি

Type Here to Get Search Results !

এসএসসি 2021 পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৪র্থ সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

৪র্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও নাগরিকতা নমুনা উত্তর

এসএসসি ২০২১ পরীক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের এসএসসি ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর নিয়ে আবার তোমাদের মাঝে চলে এলাম। SSC 2021 ৪র্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের নমুন উত্তর নিচে দেওয়া হলো তোমাদের মাঝে। আমাদের করা উত্তর নির্ভূল ও ইউনিক।

প্রিয় শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট সবসময় ইউনিক ও নিজের মতো করে লিখতে চেষ্টা করবে। আমরা সবসময় তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উত্তরটি বাছাই করে দেওয়ার চেষ্টা করি। তোমরা তোমাদের উত্তরের সাথে মিলিয়ে নাও।

৪র্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও নাগরিকতা নমুনা উত্তর

বিষয়: পৌরনীতি ও নাগরিকতা

বিষয় কোড: ১৪০

পৌরনীতি ও নাগরিকতা


রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উপাদান , রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ

ক নং প্রশ্নের উওর/ ক নং নির্দেশনার আলেfকে উত্তর

ভূমিকা: প্রতিটি নাগরিকের কাছে রাষ্ট্র একটি পরিচিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠানও বটে। মানুষ কোন না কোন রাষ্ট্রের নাগরিক। রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাষ্ট্র হচ্ছে নাগরিক জীবনের সর্বোচ্চ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক একক। মানুষকে বলা হয় সমাজিক ও রাজনৈতিক জীব। রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। অতীতে রাষ্ট এবং সরকারের মাধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা হত না। ধীরে ধীরে শব্দটি পৃথক অর্থ ধারণ করেছে এবং পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। অত্যান্ত প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য নিয়েই মানুষ রাষ্ট্র নামক সংগঠনের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান ইউনিটে নিমোক্ত পাঠগুলো আলোচনা করা হলো-

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা: বিভিন্ন লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। রাষ্ট্রের সভ্য হিসেবেই নাগরিক জীবনের শুরু। এরিস্টটলের মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি, যার উদ্দেশ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন।"

এরিস্টটলের সংজ্ঞা নগররাষ্ট্র ভিত্তিক। বর্তমানকালে নগররাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। আধুনিক রাষ্ট্র প্রধানত জাতী রাষ্ট্র। তাই আধুনিক যুগে রাষ্ট্র সম্পর্কিত সংস্থার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে।

কুন্টসলির মতে, “কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ড রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত জনসমাজই হলো রাষ্ট্র।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেন, “কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠিত জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্র বলে।”

অধ্যাপক বার্জেস- এর মতে, ”রাষ্ট্র হচ্ছে মানবজাতির সেই সংঘবদ্ধ অংশ, যা ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত।" লাস ওয়েল ও কাপান এর মতে, "সার্বভৌম ভূখন্ড ভিত্তিক গোষ্ঠীই হচ্ছে রাষ্ট্র।”

অধ্যাপক জে.এন গার্নার এর মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক জনসমাজ যা সংখ্যায় অল্পাধিক বা বিপুল এবং কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তি নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন বা প্রায় স্বাধীন এবং যার একটি সংগঠিত সরকার রয়েছে, যার প্রতি অধিকাংশ অধিবাসী স্বাভাবিকভাবে অনুগত।” 

সুতরাং রাষ্ট্র বলতে সেই জনসমষ্টিকে বোঝায়, যারা কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানায় বসবাস করে, যাদের একটি সরকার আছে সর্বোপরি যারা বহ্নিশক্তি নিয়ন্ত্রণ হতে সর্বোতভাবে মুক্ত থাকে।

রাষ্ট্রের উপাদান রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের ৪ টি উপাদান পাওয়া যায়। যথা-

  • (ক) জনসমষ্টি
  • (খ) নির্দিষ্ট ভূখন্ড
  • (গ) সরকার
  • (ঘ) সার্বভৌমত্ব।

ক. স্থায়ী জনসমষ্টি: জনসমষ্টি রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান উপাদান। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রের কথা ভাবা যায় না। আবার তেমনি জনসমষ্টির জন্যই রাষ্ট্র নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনেই রাষ্ট্র গঠন করেছে। জনমানবহীন রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। কোন ভূখন্ডের নাগরিকগণ স্থায়ীভাবে বসবাস করলে সেই জনসমষ্টিকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে। জনসংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। তবে রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কম হলেও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কোন সমস্যা হয় না। যেমন চীনের জনসংখ্যা প্রায় একশ তিরিশ কোটি আবার বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। আবার কোন রাষ্ট্রে এক নৃ-তাত্ত্বিক জনসমষ্টি থাকতে হবে এমন কথাও নয়। একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা রাষ্ট্রের প্রয়োজন ও সম্পদের সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের প্রশাসন ও উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার জন্য চলনসই জনসমষ্টি থাকলেই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে।

খ. নির্দিষ্ট ভূখন্ড: রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উপাদান নির্দিষ্ট ভূখন্ড। নির্দিষ্ট ভূখন্ড বলতে শুধু স্থলভাগকে বোঝায়। নির্দিষ্ট ভূখন্ড বলতে নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক সীমানার স্থলভাগ, নদ-নদী, আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাগর ও মহাসাগরের সীমানা এর উপরিভাগের বায়ুমন্ডলকে বোঝায়। ভূখন্ড ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। যাযাবর জাতি শুধুমাত্র নিদিষ্ট ভূখন্ডের অভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে সমর্থ হয়নি। জনসমষ্টির মত ভৌগোলিক সীমারেখার ক্ষেত্রেও কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। এই ছোট বা বঁড় দুই-ই হতে পারে। যেমন- নেদারল্যান্ডর আয়তন মাত্র সাড়ে বার হাজার বর্গমাইল, কিন্তু ভারতের আয়তন প্রায় সাড়ে বার লাখ বর্গমাইল। সুতরাং আয়তন যাই হোক না কেন, রাষ্ট্রের অবশ্যই নির্দিষ্ট ভূখন্ড থাকতে হবে।

গ. সরকার: সরকার জনগণের মুখপাত্র। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি সুসংগঠিত সরকার প্রয়োজন যার মাধ্যমে জনগণ এবং রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকর হবে। নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস করা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে সরকার গঠিত হবে। সরকার গঠিত হয় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে নিয়ে। তবে সরকারের রূপ বা প্রকৃতি সকল রাষ্ট্রে একরূপ নয়, ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সরকার দেখা যায়। যেমন: সংসদীয় সরকার, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ইত্যাদি।

ঘ. সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্র গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বোঝায়। শুধু স্থায়ী জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূন্ড এবং সরকার থাকলে রাষ্ট্র হয় না। এ তিনটি নির্দিষ্ট উপাদানের ভিত্তিতে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ এর আগে আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। যখন পূর্ববাংলার জনণের পক্ষে ঐতিহাসিকভাবে গণসমর্থনে প্রাপ্ত পরম রাজনৈতিক কর্তৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা তথা সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন তখন এই চতুর্থ উপাদানের সংযোগে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকার জন্য কোন রাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রদেশ রাষ্ট্র নয়। আন্তর্জাতিক সংঘ বা প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্র নয়। এমনকি জাতিসংঘও রাষ্ট্র নয়। সার্বভৌম ক্ষমতার দুটি দিক রয়েছে-

  • ১। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে।
  • ২। সার্বভৌম ক্ষমতা দেশকে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত রাখতে পারে।

 

খ নং প্রশ্নের উওর/ খ নং নির্দেশনার আলোকে উত্তর

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদঃ

ভূমিকা: রাষ্ট্র একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্রের উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক আছে। মূলত মানুষের বিবর্তনের এক পর্যায়ে প্রথমে গঠিত হয় পরিবার, তারপর সমাজ। সমাজ জীবনের এক পর্যায়ে মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠ্য এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র গঠন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্তমতবাদ আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য এর উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ জানা জরুরি। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা এবং যে বিবর্তনের পথ ধরে রাষ্ট্র বর্তমান স্তরে এসে পৌঁছেছে সেটা বিশ্লেষণের জন্যও এর উৎপত্তি জানা দরকার। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ চালু আছে, তার মধ্যে- ঐশ্বরিক মতবাদ, বল প্রয়োগ মতবাদ, পিতৃতান্ত্রিক মতবাদ, সামাজিক চুক্তি মতবাদ, ঐতিহাসিক মতবাদ প্রভৃতি প্রধান। নিম্নে মতবাদগুলো আলোচনা করা হলো:

  • ১. ঐশ্বরিক মতবাদ।
  • ২. বল প্রয়োগ মতবাদ।
  • ৩. সামাজিক চুক্তি মতবাদ।
  • ৪. ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ।

ঐশ্বরিক মতবাদ: 

ঐশ্বরিক বা বিধাতার সৃষ্টি মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। এ মতবাদের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে ঈশ্বর বা বিধাতার ইচ্ছানুযায়ী। রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব নেই। সমগ্র পৃথিবীর শাসনকর্তা সত্যিকার অর্থে সৃষ্টিকর্তা। তবে সৃষ্টিকর্তা নিজে রাষ্ট্র শাসন করেন না। তিনি প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র শাসন করেন। শাসক বা রাজা হলো ঈশ্বরের প্রতিনিধি। সৃষ্টিকর্তাকে যেমন অমান্য করা যায় না, তদ্রুপ তাঁর প্রতিনিধি রাজাকেও অমান্য তুচ্ছ করা যায় না। মত রাজা বা শাসকের আদেশ- সৃষ্টিকর্তারই নির্দেশ। রাজাকে অবমাননা করা মানেই সৃষ্টিকর্তাকে অবমাননা করা। শাসন করার ক্ষেত্রে রাজা ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে দায়বদ্ধ নয়।

এ কারণে রাজার স্থায়ীত্ব জনগণের ওপর নির্ভরশীল নয়। শাসকগণ একইসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান এবং ধর্মীয় প্রধান। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তবিদ সেন্ট অগাস্টিন মূলত এই চিন্তার প্রবক্তা। জন অব সেলিস বেরী, সেন্ট টমাস একুইনাস, সেন্ট গ্রেগরী, ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই এই মতবাদ বিশ্বাস করতেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এই মতবাদের স্বীকৃতি মেলে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্ট -এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বিধাতারই সৃষ্টি। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল এবং হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ মহাভারতে ঐশ্বরিক মতবাদের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীতে পুরোহিত ও যাজকদের ক্ষমতাচর্চার ক্ষেত্রেও এই মতবাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

বল প্রয়োগ মতবাদ: 

বল প্রয়োগ মতবাদের সারকথা হলো- রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে। এই মতবাদে বিশ্বাসীদের মতে, আদিম সমাজে যারা দৈহিক শক্তির অধিকারী ছিল তারা বল প্রয়োগ করে নিজ গোত্র বা গোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত। কালক্রমে খাদ্য ও বাসস্থানের চাহিদার কারণে শক্তিশালী গোত্র আবার অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী গোত্রের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। আর এভাবে সবলরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে আইন-কানুন চাপিয়ে দিয়ে রাষ্ট্র গঠন করেছে। অর্থাৎ বৃহত্তর সমাজ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মতবাদ অনুযায়ী শক্তি হলো রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি (Force is the basis of state)।

শক্তিশালী গোত্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বল গোত্রকে পরাজিত করে প্রাধান্য বিস্তার করত। এই তত্ত্ব অনুসারে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সহিংসতা, রক্তপাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবাদে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্বের কিংবা জনগণের সম্মতির কোন স্থান নেই। যুদ্ধের মাধ্যমে এক গোত্র আরেক গোত্রের পদানত হয়। অনেকক্ষেত্রে পরাজিত গোষ্ঠী দাস সমাজে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মতবাদের সঙ্গে দাসদের উদ্ভবের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।

ডেভিড হিউমকে এই মতবাদের প্রবক্তা বলা হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেংকস, জেলীনক, অধ্যাপক লিক, বার্নহার্ড, জেরমী টেলর প্রমুখ এ মতবাদ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেংকস বলেন, ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার করলে সহজেই প্রমাণ করা যায়, রাষ্টসহ আধুনিক সকল সংগঠন সার্থক যুদ্ধের ফলশ্রুতি। তার স্পষ্ট অভিমত আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের জন্ম হয়েছে সফল যুদ্ধের মাধ্যমে।

সামাজিক চুক্তি মতবাদ: 

সামাজিক চুক্তি মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে একটি কাল্পনিক মতবাদ। এই মতবাদের মূল কথা হলো- সৃষ্টির শুরুতে বা আদিম সমাজে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ প্রাকৃতিক আইন মেনে চলতো এবং তারা কিছু প্রাকৃতিক অধিকার ভোগ করত। কিন্তু প্রাকৃতিক আইন ও অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যার ফলে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের বসবাস দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রকৃতির রাজ্যের অধিবাসীরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে রাষ্ট্র গঠন করে। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি অথবা একটি কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করে। যেহেতু রাষ্ট্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে সেহেতু এ মতবাদকে সামাজিক চুক্তি মতবাদ (Social contract theory) বলে।

সপ্তদশ শতাব্দীতে টমাস হবস তার বিখ্যাত লেভিয়াথান গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেন পরবর্তীতে আধুনিক গণতন্ত্রের জনক জন লক টু ট্রিটিজেস অন সিভিল গভর্নমেন্ট” গ্রন্থে এবং অস্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দার্শনিক জঁ জ্যাক রুশো সোসাল কন্ট্রাক্ট গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মূলত এ তিনজনকেই সামাজিক চুক্তি মতবাদের তাত্ত্বিক বলা হয়। প্রাচীন গ্রিসের সোফিস্ট্রগণ এ মতবাদে বিশ্বাস করতেন। প্লেটো, এরিস্টটলের লেখায়ও এ বিষয়ের ইঙ্গিত আছে।

ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ: 

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদগুলোর মধ্যে এ মতবাদ সবচেয়ে আধুনিক, যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ। বিবর্তনমূলক মতবাদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উৎপত্তির সবচেয়ে সঠিক বর্ণনা পাওয়া যায়। এ মতবাদের মূল কথা হলো, রাষ্ট্র কোন একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। বহু যুগের বিবর্তনের ফল রাষ্ট্র। পরিবার কিংবা সমাজ থেকে রাষ্ট্রের বিবর্তনে কতকগুলো উপাদান কাজ করেছে। অধ্যাপক গার্নার, বার্জেস, গেটেলসহ প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের উদ্ভবের ক্ষেত্রে এ মতবাদকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে রায় দিয়েছেন।


গ নং প্রশ্নের উওর/ গনং নির্দেশনার আলোকে উত্তর

ভূমিকা: রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি উলেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সরকারকে রাষ্ট্রের মুখপাত্র বলা হয়। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রকাশিত ও কার্যকর হয়। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্য কথায়, রাষ্ট্রের কাজে নিয়োজিত শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমষ্টিকে সরকার বলে। সরকার রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাবলে শাসন কার্য পরিচালনা করে। রাষ্ট্রভেদে সরকারের রূপ ও সংগঠন আলাদা হয়ে থাকে। প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে।

সরকারের সংজ্ঞা: বিভিন্ন রাষ্ট্র চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংজ্ঞা দিয়েছেন। অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, "সরকার হলো রাষ্ট্রের মুখপাত্র। সরকার হলো একটি যন্ত্রবিশেষ। যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার কার্যাবলি সুসম্পন্ন করে থাকে।"

সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র তার ইচ্ছাসমূহের বাস্তবায়ন ঘটায়। কেউ কেউ সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে থাকেন। সরকারই রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি।

রাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক: রাষ্ট্র ও সরকারের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রাচীকালে রাষ্ট্র ও সরকারকে একই অর্থে ব্যবহার করা হত। আপাত দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও সরকার শব্দ দুটি সমার্থক মনে হলেও উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। আর সরকার সেই ধারণার বাস্তব সংগঠন। রাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। চারটি অন্যতম উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। এর একটিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। আর সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি উপাদান। এদের মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। অধ্যাপক গার্নার বলেন, ”রাষ্ট্রকে যদি জীবদেহ মনে করা হয় তাহলে সরকার হলো এর মস্তিক”

তবে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

  • ১। সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি।
  • ২। রাষ্ট্র স্থায়ী, সরকার অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল।
  • ৩। সরকার বা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র বিমূর্ত ধারণা।
  • ৪। রাষ্ট্র মোট জনসমষ্টি নিয়ে গঠিত। সরকার মোট জনসমষ্টির একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত।
  • ৫। সরকারের বিভিন্ন রূপ হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়।
  • ৬। রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয় না।
  • ৭। রাষ্ট্র সার্বভৌম বা চরম ক্ষমতার অধিকারী, আর সরকার সেই চরম ক্ষমতার বাস্তবায়নকারী মাত্র।
  • ৮। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যত পার্থক্য থাকুক না কেন, সরকার না থাকলে রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায় না। আর রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

উপসংহারে বলা যায় যে, সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি উলেখযোগ্য ও অন্যতম উপাদান। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রকাশিত ও কার্যকর হয়। সরকার রাষ্ট্রের মুখপাত্র সরকার রাষ্ট্রের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করে। সরকার বলতে সেই জনগণকে বুঝায় যারা আইন প্রণয়ন, শাসন পরিচালনা ও বিচার কাজের সাথে জড়িত। সরকারের সাথে রাষ্ট্রের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। ক্ষমতার ভিত্তিতে সরকার দুই ধরনের। গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র। গণতান্ত্রিক সরকার দুই ধরনের নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র। আঞ্চলিক ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার দু ধরনের। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয়। আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে গনতান্ত্রিক সরকার আবার দু ধরনের, সংসদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সরকার পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দুই ধরনের হয়ে থাকে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.