SSC 2021 ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টঃ অর্থনীতি
এস.এস.সি. পরীক্ষা -২০২১
সপ্তাহ: ৪ র্থ সপ্তাহ
বিষয় কোডঃ ১৪১
অ্যাসাইনমেন্ট নং -৩
শিরোনামঃ উপযোগ, চাহিদা, যোগান ও ভারসাম্য।
ভূমিকাঃ মানুষের অভাব পুরনের ক্ষমতা হলো উপযোগ এবং এই অভাব পুরনের জন্য যে চাহিদা ও যোগানের সম্পর্ক তা হল কোন একটি পণ্যের বা সেবার ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বিদ্যমান বাজার সম্পর্কে বোঝায়। বাজারে কোন পণ্যের দাম এবং সরবরাহ কী - রূপ হবে তা চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক দ্বারাই নির্ধারিত হয়।
অধ্যাপক মার্শাল এর মতে “একটি মুক্ত প্রতিযোগিতামুলক বাজারে পণ্যের প্রকৃত বিক্রয় মূল্যই ভোক্তার চাহিদা এবং বিক্রেতার সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং একটি সাম্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। নিন্মে নির্দেশ মোতাবেক ‘ক’ ‘খ’ ‘গ’ এবং ‘ঘ’ এর উত্তর দেয়া হলঃ
নির্দেশক 'ক' এর উত্তর
উত্তর: সাধারণ অর্থে উপযোগ বলতে কোনো দ্রব্যের অভার পূরণের ক্ষমতাকে বুঝানো হয়। কলম, চাল, কাপড়, ঘরবাড়ি, ঔষুধ, শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল ইত্যাদি দ্রব্য ও সেবা মানুষের অভাব পূরণ করে থাকে, তাই এইগুলোর উপযোগ রয়েছে। কিন্তু কোনো দ্রব্য একাধারে গ্রহণ করলে তার উপযোগ সব সময় সমান থাকে না। যেমন: কোনো ব্যক্তি একের পর এক ফুচকা খেতে থাকলে কোন এক সময় আর ফুচকা খেতে চাইবে না। কারণ ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে ফুচকা গ্রহণের মাধ্যমে তার অভাব পূরণ করেছে।
উপযোগ সম্পর্কে অধ্যাপক মেয়ার্স বলেছেন," Utility is the quality or capacity of a goods which enables it to satisfyhuman wants ."
"অর্থাৎ, উপযোগ হলো কোনো দ্রব্যের গুণ বা ক্ষমতা যা মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে উপযোগ একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। কারণ সব পণ্যের চাহিদা সকলের কাছে একই ধরনের নাও হতে পারে। যেমন- যে ব্যক্তি দুই দিন ধরে না খেয়ে আছে তার কাছে এক টুকরো রুটি যেমন খুবই মূল্যবান আবার যার কোন ক্ষুধা নাই তার কাছে এর উপযোগ তেমন নাও থাকতে পারে । উপযোগ হচ্ছে পণ্যের মধ্যে অন্তর্নিহিত একটি উপাদান যার জন্য মানুষ ঐ পণ্য ক্রয় করে থাকে। যে জিনিসের উপযোগ নেই তা কেউ চায় না বা বিক্রয় হয় না। সুতরাং, বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্তুগত সামগ্রীর মধ্যে মানুষের অভাব পূরণের যে ক্ষমতা ও গুণ বিদ্যমান থাকে তাকেই ঐ সামগ্রীর উপযোগ বলে।
মোট উপযোগ:
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগের সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে। অর্থাৎ কোনো দ্রব্যের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে প্রান্তিক উপযোগের যোগফলকে মোট উপযোগ বলে।
TU = MU1+ MU2+ MU3+ ................ + MUn [TU=Total Utility, MU= Marginal Utility]
ধরা যাক, একজন ভোক্তা ১ম একক ফুচকা থেকে ২৫ ইউটিল, ২য় একক ফুচকা থেকে ২০ ইউটিল, ৩য় একক ফুচকা থেকে ১৫ ইউটিল উপযোগ পায়। তাহলে, মোট উপযোগ,
TU = ২৫ + ২০ + ১৫ = ৬০ ইউটিল।
প্রান্তিক উপযোগ:
কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত একক ভোগের ফলে যে বাড়তি উপযোগ পাওয়া যায়, তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। অর্থাৎ ভোগ বৃদ্ধির ফলে মোট উপযোগের যতটুকু বৃদ্ধি পায়, তাই প্রান্তিক উপযোগ। প্রান্তিক উপযোগ,
MU = ΔTU/ΔQ
ধরা যাক, একজন ভোক্তা ২ টি আম ভােগ করে ২০ ইউটিল এবং ৩ টি আম ভোগ করে ৩২ টটিল উপযোগ লাভ করে।
মোট উপযোগের পরিবর্তন, ΔTU = ৩২-২০ = ১২ ইউটিল।
দ্রব্য ভোগের পরিবর্তন , ΔQ = ৩-২ = ১ একক প্রান্তিক উপযোগ,
MU = ১২/১ = ১২ ইউটিল
নির্দেশক 'খ' সূচি তৈরি :
উত্তর :
কোন ভোক্তার বিভিন্ন একক ফুচকা ভোগের ফলে প্রাপ্ত মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগের সূচি তৈরি করা হলো-
প্রদত্ত তালিকা থেকে দেখা যায়, ফুচকা ভোগের একক বাড়ার সাথে সাথে মোট উপযোগ বাড়ে, তবে ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে। এতে প্রান্তিক উপযোগ ক্রমশ হ্রাস পায়। হ্রাস পেতে পেতে ৭ম এককে শূণ্য হয়। যদি আরও একক বৃদ্ধি পেত তবে প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক হতো।
নির্দেশক ‘গ’ সূচি অনুযায়ী রেখা অঙ্কন:
উত্তরঃ
রেখাচিত্রের ব্যাখ্যা: চিত্রে ভূমি অক্ষে ভোগের একক ফুচকা এবং লম্ব অক্ষে প্রান্তিক উপযােগ নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে ১ম একক থেকে ৬ষ্ঠ একক পর্যন্ত প্রান্তিক উপযোগ ক্রমহ্রাসমান হয়েছে এবং তা ৭ম এককে শূণ্য হয়েছে। তাই বলা যায় প্রান্তিক উপযোগ রেখা ডানদিকে নিম্নগামী।
নির্দেশক ‘ঘ’ বিধিটির কার্যকারীতা:
একটি নির্দিষ্ট সময়ে একের পর এক ফুচকা খেলে ফুচকার উপযোগ ক্রমেই কমতে থাকে- উক্তিটি উপযোগের ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগের বিধির অনুরূপ।
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগের বিধিটি হলো:- "অন্যান্য অবস্থা স্থির রেখে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভোক্তা যদি একটি পণ্যের ভোগের পরিমাণ বাড়াতে থাকে, তাহলে ঐ পণ্যের অতিরিক্ত এককগুলাে থেকে যে উপযোগ পায় তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।”
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধির সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় অর্থাৎ এর কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর কার্যকারিতা সীমাবদ্ধগুলো:
১। অপরিবর্তনীয়তা: নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে ভোক্তার আয়, রুচি, অভ্যাস, পছন্দ স্থির বলে অনুমান করা হয়। এগুলো কোনো একটির পরিবর্তন হলে এ বিধি কার্যকর হয়না।
২। সময় ব্যবধান: সময় ব্যবধান মেনে নিলে এ বিধি কার্যকর হয়না। কারণ, দীর্ঘ সময় পরে মানুষের কোনো দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ না কমে বাড়তে পারে।
৩। পরিমাণ: অভাবের তুলনায় দ্রব্য ভোগের পরিমাণ খুবই সামান্য হলে এ বিধি কার্যকর হয়না।
৪। শৌখিন দ্রব্য: শৌখিন দ্রব্যের বেলায় এ বিধি কার্যকর হয়না। শখের কারণে দৃপ্রাপ্য দ্রব্য সামগ্রী সংগ্রহ ও ভোগের ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযোগ ক্রমবর্ধমান হয়।
৫। বিলাসজাত দ্রব্য: সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির কারণে বিলাসজাত দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমশ বাড়ে।
৬। ভোক্তার চরিত্র: ভোক্তার চরিত্র অস্বাভাবিক হলে অর্থাৎ ভোক্তা যুক্তিশীল না হলে এ বিধি কার্যকর হয়না।
উপসংহার:- চাহিদা এবং যোগান বলতে কোন একটি পণ্যের বা সেবার ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বিদ্যমান বাজার সম্পর্ক বোঝায়। বাজারে কোন পণ্যের দাম এবং সরবরাহ কী-রূপ হবে তা চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক দ্বারাই নির্ধারিত হয়। ব্যষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি মৌলিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাখ্যার পাশাপাশি নতুন নতুন তত্ত্ব তৈরির ক্ষেত্রেও এটি প্রায় সর্বদা ব্যবহৃত হয়।
Post a Comment
0 Comments