প্রিয় এইচএসসি ২০২২ শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, আজকের পোস্টে তোমাদর জন্য থাকলো HSC 2022 সালের ৬ষ্ট সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান। বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
অন্যান্য বিষের উত্তর পেতে খুজে দেখুন আমাদের সাইটের অ্যাসাইনমেন্ট ট্যাগে।
বিষয়ঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিষয় কোডঃ ২৭৫
ভূমিকা: আধুনিক যুগে যখন বিশ্বায়নের প্রভাব পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্তর থেকে আমাদের ঘরের অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে গিযেছে। এখন বিশ্বব্যাপী তথ্য এবং যােগাযােগ প্রযুক্তির ব্যাপক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীর মােট জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে নানা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনার উদ্যোগকারী বিজ্ঞান নির্ভর কল্পনাকে ভাচুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবের বাস্তবতা বলে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম, যাতে মডেলিং ও অনুকরণবিদ্যা প্রযোগের মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অনুকরণকৃত পরিবেশ হুবহু বাস্তব পৃথিবীর মতো হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে অনেক সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভব হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তথ্য আদান প্রদানকারী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সংবলিত হেড মাউন্ডেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভ, পূর্ণাঙ্গ বডি সুইট ইত্যাদি পরিধান করার মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বাস্তবকে উপলব্ধি করা হয়।
প্রাত্যহিক জীবনে ভাচুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ এবং প্রভাবঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যখন এর প্রয়োগ অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে যাবে, তখন তা বিনোদন থেকে শুরু করে যোগাযোগ পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হবে। এ খাতে বর্তমানে উন্নত বিশ্বে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। সম্প্রতি গুগল মিট, জোম মিটিং এর মতো জনপ্রিয় অনরক ভার্চুয়াল সেটিং সেবা চালু হয়েছে।
যেথানে ভার্চুয়াল কক্ষে বা পরিবেশে যে কেউ তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের নিয়ে প্রবেশ করতে পারে এবং অনুভব করতে পারে বাস্তবিক আজ্ঞা ও আলোচনা। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগের ফলে সমাজে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন।
ইতিবাচক প্রভাবঃ
চিকিৎসাক্ষেত্রে: উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে এমআইএমটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাবরোস্কোপিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতিতে কম্পিউটার সিম্যুলেশন ব্যবহার করে ল্যাবরোস্কোপিক পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়। শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা এর ফলে অন্তত সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিযেটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং ভার্চুয়াল অপারেটিং কক্ষে ছাত্ররা কৌশলগত দক্ষতা, অপারেশন এবং রোগসম্পর্কিত তাত্বিক বিষয়াদির কার্যাবলি অনুশীলন করতে সক্ষম হন।
খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে মানুষ বিভিন্ন খেলাধুলার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানতে পারছে কম্পিউটারের সাথে কোন একটি গেমে অংশগ্রহণ বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি একই গেমে অংশগ্রহণ করতে পারছে। দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক সিমুলেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কার্টুন, ঐতিহাসিক ছবি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা পূরাণিক কাহিনী নির্ভর ছবি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে।
সামরিক বাহিনীতে: সামরিক বাহিনীতে অনেক বছর ধরে মিলিটারি প্রশিক্ষণে ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রচলিত ফ্লাইট সিমুলেটরের আরও উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এ ছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিমুলেটেড ওযার দ্বারা সেনাদের অনেক বেশি বাস্তব ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।
অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর: বর্তমান সমাজের মনুষ্যত্বহীনতা ইস্যুটি হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আরও একটি নেতিবাচক দিক। তাই যদি বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিসতৃতি লাভ করে, তাহলে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। কারণ, মানুষ তখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দ্বারা বাস্তব জীবনের চেয়েও অনেক ভালো এবং মনের মতো পরিবেশ পাবে। আর এসব চলতে থাকলে মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে আর বেশি সময় লাগবে না।
কল্পনা নির্ভর: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছামতো বিচরণ করতে পারে। ফলে, দেখা যাবে যে বেশির ভাগ সময় কাটবে কল্পনা কল্পনার জগতে। খুব কম সময় থাকবে বাস্তব জগতে। কিন্তু এভাবে যদি মানুষ দিনের পর দিন কল্পনার জগতে পড়ে থাকে বাস্তব জীবনের সাথে মিল করতে না পেরে হিনমন্যতায় ভুগবে। ফলে, পৃথিবী চরম অনিশ্চিয়তার সম্মুখীন হবে।
স্বাস্থ্যের ক্ষতিঃ এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতি সাধন করে।
বায়োমেট্রিক্সের ধারণাঃ গ্রীক শব্দ metron অর্থ পরিমাপ এবং bio অর্থ জীবন, এ দুটি শব্দ থেকে Biometrics শব্দের উৎপত্তি। বা্যোমেট্রিক্স হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কোন ব্যক্তির দেহের গঠন এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তাকে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত বা সনাক্ত করা যায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিকে ব্যক্তি সনাক্তকরণ এবং কোন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেহের গঠন এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
নিচে বিভিন্ন প্রকার বায়োম্যাট্রিক্স পদ্ধতির উদাহরন দেওয়া হলো-
ক . দেহের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিঃ
- ১. ফিংগার প্রিন্ট
- ২. হ্যান্ড জিওমিট্রি
- ৩. আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান
- ৪. ফেইস রিকোগনিশন
- ৫. ডিএনএ টেস্ট
খ.আচরণগত বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিঃ
- ১.ভযেস রিকগনিশন
- ২.সিগনেচার ভেরিফিকেশন
- ৩.টাইপিং কী স্ট্রোক
বায়োমেট্রিক্স প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহঃ
অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে তাদের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতি ও প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহৃত হয়।
পাসপোর্ট তৈরিঃ বিদেশে গমনের জন্য পাসপোর্ট তৈরি এবং ব্যক্তির নিরাপত্তা ও তথ্য নিশ্চিতে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।
যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে: কারও কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সে কখনো যানবাহন চালাতে পারবে না। আর এই লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রেও বায়োমেট্রিক্স ব্যবহৃত হয়।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রে: ব্যাংকিংক্ষেত্রে ব্যাংকের লেনদেনে যেন কোনভাবেই সমস্যার সৃষ্টি না হয় অর্থাৎ একজনের টাকা অন্যজন যেন উত্তোলন করতে না পারে তা নিরাপত্তায় ' বায়োমেট্রিক্স ব্যবহৃত হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে: দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং সর্বক্ষেত্রে নিজের পরিচিতি নিশ্চিতের জন্য যে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় তা তৈরিতেও বায়োমেট্রিক্স ব্যবহৃত হয়।
মোবাইল সিম নিবন্ধনেঃ বর্তমান সরকার দেশের সব মোবাইল সিম নিবন্ধনে। বায়োমেট্রিক্স বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তা কার্যকর করেছে।
রোবটিক্সের ধারণাঃ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যে মেশিন মানুষের মতো কাজ করে তাকে বলা হয় রোবট। আর প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের নকশা, গঠন ও কাজ নিয়ে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে রোবটিক্স বলা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবটের দর্শন ক্ষমতা, স্পর্শ ক্ষমতা, হাত ও পায়ের যথাযথ পরিচালন, চলাচলের ক্ষমতা, শারীরিক মুভমেন্ট ইত্যাদি উদ্ভব হয়েছে। রোবটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে' রোবট অত্যন্ত দ্রুত, ক্লান্তিহীন ও নিখুঁত কর্মক্ষম একটি যন্ত্র। রোবটের সাহায্যে যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা যায়। তবে রোবট তৈরি করা ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার।
জাপানের মুরাতা কোম্পানির “মুরাতা বয়", হান্ডো কোম্পানির “আসিমো", মনি কর্পোরেশনের “আইবো” ইত্যাদি রোবট প্রায় মানুষের মতই বিশেষ কোন কাজ করতে পারে।
রোবটিক্স প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহঃ বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন- শিল্পকারখানায় বিভিন্ন শিল্পের বিপজ্জনক ও কঠিন কাজ করার ক্ষেত্রে রোবটিক্সের ব্যবহার করা হয়। এগুলো বৃহৎ মেশিনের কষ্টদায়ক যন্ত্রপাতির সংযোজন করে।
রোবটের ব্যবহার ক্ষেত্র:
খনিতেঃ মাটির গভীরের নানাধরনের খনি হতে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ উত্তোলন করার ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার হয়।
মহাকাশ গবেষণায়: আমাদের মহাকাশের জ্ঞানকে আরও বিস্তৃত করতে মহাকাশ গবেষণায় রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও তারা সেখানে ছবি সংগ্রহ করে।
বাসা বাড়ি ও রেস্তোরায়: গৃহস্থালীর কাজে এবং রেস্তোরায় খাবার পরিবেশনের কাজে রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্রেঃ যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে গভীর অরণ্য কিংবা বহুদূরত্বে শক্রর উপস্থিতির প্রমাণে রোবোটিক্সের প্রয়োগ হয়।
উপসংহার: প্রযুক্তি হল সভ্যতার কাছে এক প্রকার আশীর্বাদসরূপ। আর তথ্যপ্রযুক্তি সেই আশীর্বাদের সবচেয়ে বড় উপহার। বর্তমান যুগ একদিকে যেমন তথ্য নির্ভর। বিজ্ঞানের আশির্বাদে এই দুয়ের অভিনব মেলবন্ধন আজ সম্ভব হয়েছে। তাই বহু নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বের কথা আর অস্বীকার করা যায় না।
Post a Comment
0 Comments