প্রিয় পাঠক, ইভিশন বরাবরই মানুষের জন্য প্রয়োজীয় কিছু নিয়ে বারবার ফিরে আসে। ইভিশনের স্বাস্থ্য বিভাগে পর্ব পর্ব করে প্রকাশিত হবে প্রফেসর ডা. মো. সহিদুর রহমান স্যারের পায়ুপথ ও পাইলস বিষয়ক পরামর্শ।
প্রিয় পাঠক, আপনারা আপনাদের মতামত জানানোর জন্য নিচে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আর আমাদের ফেইজবুকক পেইজে লাইক দিতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
ই-ভিশন বিডি’র ফেইজবুক পেইজ(open)
রেকটাম
রেকটাম সংজ্ঞা: কোলনের শেষ অংশ ও পায়ুপথের উপরের অংশকে রেকটাম বলে। রেকটাম সাধারণত ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা। তিনভাবে বিভক্ত, প্রথম অংশ উপরে, দ্বিতীয় অংশ মাঝখানে, তৃতীয় অংশ নিচে।
কী কী রোগে রেকটাম আক্রান্ত হয়
- ১) রেকটাল পলিপ
- ২) রেকটাল আলসার
- ৩) রেকটাল ক্যানসার
- ৪) রেকটাল প্রলাপস
- ৫) প্রভৃতি
রেকটাল পলিপ
দশ-বারো
বছর বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ রোগের হার অধিক। অসুখটি প্রথমে নজরে আসে মায়ের। মায়ের
বর্ণনা এ রকম—
বাচ্চাটি
পায়খানা করতে বসছে। মলের সাথে এক টুকরো মাংসপিণ্ড বাইরে ঝুলে আছে। আবার কেউ কেউ বলে,
এই বাচ্চা ইদানীং মলত্যাগ করলেই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তে দেখা যায়। মলত্যাগের পর উঠে
দাঁড়ালেই এই মাংসপিণ্ড ভিতরে ঢুকে যায়। কোনো বাচ্চা নিজে নিজে চাপ দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে
দেয়। প্রথমে অনেক বাচ্চা বা বাচ্চার বাবা-মা আতঙ্কিত থাকে। যন্ত্রণা ভাব নিয়ে ছোটাছুটি
করে। কিছুদিন এই যন্ত্রণা দেখতে দেখতে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে
দেখা গেছে আপনা আপনি মাংসপিণ্ড পড়ে যেতে। অনেকের আবার সার্জারি করতে হয়। সার্জারি
চিকিৎসা খুবই সফল। তবে বায়োপসি করা হয়। সাধারণত ক্যানসার নয় এটি।
রেকটাল আলসার
মধ্যবয়সী
এক ব্যক্তি, তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ঐ বরাবর পিঠের নিচের অংশে ব্যথা। প্রায়ই রক্ত
পায়খানা হয়। ব্যথার কারণে সে সকল কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। অনেক চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হয়েছে। প্রায় সকলেই তাকে রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসা দিয়েছে। আমি কোলোনোসকোপী
করে তার এই আলসার ধরি। তারপর বায়োপসি করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হই যে ক্যানসার হয় নাই।
এখন তার চিকিৎসা চলছে, আশা করি ভালো হয়ে যাবে। যদি এতে ভালো না হয় তাহলে সার্জারি
করব।
কেন
হয়: তার এই রোগের কারণ সে বলতে পারল না। তবে ইউরোপ আমেরিকার দিকে এই রোগের ইতিহাস
খুবই নোংরা। বলা হয়ে থাকে যে, যারা হোমোসেক্স করে তাদের এই রোগ হয়। যারা দীর্ঘদিন
ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন, তাদের এই রোগের হার বেশি।
রেকটাল ক্যানসার
রেকটাল
ক্যানসার যুবক বয়সে এই রোগ হলে এর ভয়াবহতা অতি মারাত্মক। যত সার্জারি করা হোক না
কেনো, ১ বছর বয়সের মধ্যেই মারা যায়। সাধারণত ৫৫ বছর বয়সে এই রোগের হার অধিক।
রেকটাল ক্যান্সারে কী কী লক্ষণ তৈরি হয়
- ১) রক্তপাত
- ২) ভোরের ডায়রিয়া ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়। রক্ত মিশ্রিত ঘন ঘন পায়খানা হলে ইনফেকশন হয়েছে ধারণা করা হয়।
- ৩) আম বা মিউকাস ঝরে, পুঁজ পড়ে।
- ৪) ভীষণ পায়খানার বেগ কিন্তু মলত্যাগ করতে গেলে কোনো মল বের হয় না, ক্যানসার ইঙ্গিত করে।
- ৫) রেকটাম বাইরে সম্পূর্ণ রূপে, কখনো কখনো আংশিকভাবে বেরিয়ে থাকে।
- ৬) মলদ্বারে চুলকানি থাকে।
- ৭) শরীরের ওজন কমে যায়৷
প্রাথমিক
লক্ষণ এতই অল্প যে, রোগীরা ৬ মাস বা আরো পরে এই রোগের জন্য চিকিৎসকের কাছে আসে।
১.
রক্ত ক্ষরণ: প্রথম লক্ষণ– সামান্য বা বেশি রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। তাই পাইলস মনে করে
চিকিৎসা নিতে দেরি করে। অনেক ক্ষেত্রে পাইলস ও ক্যানসার একত্রে থাকে। যদি কেউ ডিজিটাল
রেকটাল পরীক্ষা না করে, তবে তার রোগ নির্ণয়ে মারাত্মক ভুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক
সময় এডভান্স ক্যানসার নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে, যা খুবই বেদনাদায়ক।
২.
অসম্পূর্ণ মলত্যাগ: পায়খানা করার পর মনে হবে আরো মল রয়ে গেছে। তাই বারবার মলত্যাগে
টয়লেটে যাবে। মল ত্যাগের সময় শুধু হাওয়া ও রক্ত মিশ্রিত মিউকাস যাবে।
৩.
টয়লেট অভ্যাসের পরিবর্তন: পায়খানা হবে না মনে করে প্রচুর ঔষধ সেবন করতে চায়, স্বাভাবিক
মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায়, ফলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত যে সময়ে সকালে ঘুম
থেকে ওঠে এবং টয়লেটে যায়, তার চেয়ে আরো আগে ঘুম ভাঙে এবং প্রচুর পাতলা পানির মতো
পায়খানা হয়। যা থেকে ধারণা করা যায় রেকটামের নিচের অর্ধেক অংশে ক্যানসার। আর যদি
পায়খানা কয়েকদিন ধরে না হয় তবে ক্যানসার রেকটামের উপরের অংশে অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত
হওয়া যায়৷
ক.
ব্যথা: যদি ক্যানসার সামনে প্রোস্টেট বা মূত্রথলির দিকে অগ্রসর হয় তবে সামনের অংশে
প্রচুর ব্যথা হবে। আর যদি সায়াটিকা বাতের মতো ব্যথা হয় তবে বুঝতে হবে স্যাকরাল নার্ভ
ধরে ফেলেছে।
খ.
শরীরের ওজন কমে যাওয়া : যখন ক্যানসার লিভারকে আক্রমণ করে তখন শরীরের ওজন কমতে থাকে৷
পরীক্ষা
- ১. পেট পরীক্ষা: প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু পাওয়া যায় না। এডভান্স হলে পেটে পানি চলে আসে। পেটে শক্ত চাকা হাতে লাগবে। পেট ফুলে যায়।
- ২. ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা: যার দ্বারা রেকটাল ক্যানসার ধরা পড়ে তা হলো– হাতের আঙুলে রক্ত বা মিউকাস লেগে থাকে।
- ৩. প্রোকটোসকপি পরীক্ষা
- ৪. সিগময়ডোসকপিক পরীক্ষা
- ৫. ফুল কলোনোসকপি
- ৬. বায়োপসি
- ৭. বেরিয়াম এক্সরে
- ৮. আলট্রাসনোগ্রাম
- ৯. সিটি স্কান
- ১০. এন্ডোলুমিনাল আল্ট্রাসনোগ্রাম
চিকিৎসা
চিকিৎসা প্রদানের সফলতা নির্ভর করে রোগটি কোন্ পর্যায়ে আছে।
- ১. শুধু রেকটামের ভিতর টিউমারের সূচনা তখন সেই অংশটুকু কেটে ফেলা হয়। যার নাম এনটেরিওর রিসেকশান। এতে কোলোসটমি লাগে না।
- ২. যদি রেকটামের নিচের অর্ধেক অংশে ক্যানসার হয় তাহলে এপিআর করা হয় (Abdomino perineal resection). এতে স্থায়ী কোলোসটমি করা হয়।
- ৩. লিভারে রেকটাল ক্যানসার মেটাসটাসিস হয়েছে সে ক্ষেত্রে সার্জারি করা হবে একত্রে লিভার ও রেকটামের।
- ৪. অনেক সময় রেকটামে ক্যানসার বেশ বড় আকারের হয়ে পড়েছে সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি দিয়ে টিউমার সাইজ ছোট করে সার্জারি করা হয়।
- ৫. সার্জিকালি আনফিট রোগীর রেডিওথেরাপি করা হয়।
Post a Comment
0 Comments