প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা বরাবরে মতো গণিতের প্রাথমিক অথচ দরকারি বিষয় অনুপাত ও সমানুপাত বিষয়ে তোমাদের সামনে নিয়ে আসতে চেষ্টা করলাম এর বিস্তারিত।
অনুপাত: দুইটি একজাতীয় রাশির একটি অপরটির তুলনায় কতগুণ বা কত অংশ তা একটি ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এ ভগ্নাংশকে রাশি দুইটির অনুপাত বলে। যেমন: ১ সে.মি. ও ২ সে.মি. ব্যাস বিশিষ্ট দুইটি বৃত্তের ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় বৃত্তের ব্যাসের অনুপাত
একে অনুপাতে লিখলে লিখা যায় ১:২ [ ‘:’ চিহ্নটি হল অনুপাতের গাণিতিক চিহ্ন।]
সরল অনুপাত: অনুপাতে দুইটি রাশি থাকলে, তাকে সরল অনুপাত বলে। সরল অনুপাতের প্রথম ও দ্বিতীয় রাশিকে যথাক্রমে পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি বলা হয়। যেমন- ৭:৫ অনুপাতটিতে পূর্ব রাশি ৭ এবং উত্তর রাশি ৫।
লঘু অনুপাত: কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি উত্তর রাশি থেকে ছোট হলে, তাকে লঘু অনুপাত বলে। যেমন- ৩:৮ [এখানে, পূর্বরাশি ৩, উত্তর রাশি ৮ থেকে ছোট]
গুরুঅনুপাত: কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি উত্তর রাশি থেকে বড় হলে, তাকে গুরু অনুপাত বলে। যেমন ৮ :৩ [এখানে, পূর্বরাশি ৮, উত্তর রাশি ৩ থেকে বড়।]
একক অনুপাত: কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি পরস্পর সমান হলে, তাকে একক অনুপাত বলে। যেমন- ৫:৫ বা ১:১
গ.সা.গু ও ল.সা.গু বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
অনুপাত সম্পর্কিত সাধারণ নিয়ম:
- (ক) কোন অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশিকে ০ বাদে একই সংখ্যা দিয়ে গুণ বা ভাগ করলে প্রদত্ত অনুপাতের মানের পরিবর্তন হয় না। যেমন: ৫:৪ = (৫×১০):(৪×১০)=৫০:৪০
- (খ) ভগ্নাংশের মতই অনুপাতকে লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করা যায়। যেমন, ৫০:৪০=৫:৪ [পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশিকে ১০ দ্বারা ভাগ করে]
ব্যস্ত অনুপাত: সরল অনুপাতের উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি এবং পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে সরল অনুপাতটির ব্যস্ত অনুপাত বলা হয়। যেমন: ১৬:৫ এর ব্যস্ত অনুপাত ৫:১৬।
মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত: একাধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশিগুলোর গুণফলকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত বলে। যেমন: ৪:৩, ৭:১২ ও ৯:৫ এর মিশ্র অনুপাত নিম্নরূপ:
প্রদত্ত অনুপাতগুলোর পূর্ব রাশি ৪, ৭, ৯ এর গুণফল= ৪×৭×৯=২৫২
এবং এদের উত্তর রাশি ৩,১২, ৫ এর গুণফল= ৩×১২×৫=১৮০।
∴নির্ণেয় মিশ্র অনুপাত = ২৫২:১৮০ বা, ৭:৫।
দ্বিগুণানুপাত: কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশির বর্গকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশির বর্গকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে প্রদত্ত অনুপাতের দ্বিগুণানুপাত বলা হয়।
দ্বিভাজিত অনুপাত: কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশির বর্গমূলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশির বর্গমূলকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে প্রদত্ত অনুপাতের দ্বিভাজিত অনুপাত বলা হয়। যেমন: ২৫:৯ এর দ্বিভাজিত অনুপাত = √২৫:√৯=৫:৩
বহুরাশিক অনুপাত: মনেকরি, একটি ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ , উচ্চতা যথাক্রমে ১৭, ১৫ ও ১০ মিটার। তাহলে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার অনুপাত = ১৭:১৫:১০ এটি একটি বহুরাশিক অনুপাত। এভাবে তিনের অধিক রাশি নিয়েও অনুপাত গঠন করা যায়।
ধারাবাহিক অনুপাত: দুইটি অনুপাত ক:খ এবং খ:গ আকারের হলে, তাদের সাধারণত ক:খ:গ আকারে লেখা হয়, একে ধারাবাহিক অনুপাত বলা হয়।
ধারাবাহিক অনুপাতের নিয়ম: প্রথম অনুপাতের রাশি দুইটিকে দ্বিতীয় অনুপাতের পূর্ব রাশি দ্বারা গুণ করতে হবে। আবার দ্বিতীয় অনুপাতের রাশি দুইটিকে প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি দ্বারা গুণ করতে হবে। যেমন: ৫:৭ ও ৯:১১ কে নিম্নলিখিতভাবে ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ করা যায়।
প্রথম অনুপাত =৫:৭=(৫:৭)×৯=৪৫:৬৩,
দ্বিতীয় অনুপাত= ৯:১১=(৯:১১)×৭=৬৩:৭৭ সুতরাং প্রদত্ত অনুপাত দুইটির ধারাবাহিক অনুপাত ৪৫:৬৩:৭৭।
সমানুপাত: ৪ টি রাশির ১ ম ও ২ য় রাশির অনুপাত এবং ৩ য় ও ৪ র্থ রাশির অনুপাত পরস্পর সমান হলে, ঐ ৪ টি রাশি একটি সমানুপাত তৈরি করে। সমানুপাতের প্রত্যেক রাশিকে সমানুপাতী বলা হয়। যেমন: মনেকরি, ৪ টি রাশি যথাক্রমে ৬ কেজি, ৮ কেজি, ২৪ টাকা ও ৩২ টাকা। এখন, ১ম রাশি:২য় রাশি=৬ কেজি:৮ কেজি=৬:৮= ৩:৪
আবার, ৩য় রাশি:৪র্থ রাশি = ২৪ টাকা:৩২ টাকা=২৪:৩২= ৩:৪
সুতরাং ৬:৮=২৪:৩২ [৬:৮= ৩:৪; ২৪:৩২= ৩:৪]
লক্ষ করি:
- → সমানুপাতের ১ম ও ৪র্থ রাশিকে প্রান্তীয় রাশি বলে।
- → সমানুপাতের ২য় ও ৩ য় রাশিকে মধ্য রাশি বলে।
- → সমানুপাতে '=' চিহ্নের পরিবর্তে '::' চিহ্নও ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: সমানুপাতের ১ম রাশি×৪র্থ রাশি = ২য় রাশি×৩য় রাশি।
অনুরূপভাবে,
ক্রমিক সমানুপাত: তিনটি রাশির মধ্যে ১ম ও ২য় রাশির অনুপাত এবং ২য় ও ৩য় রাশির অনুপাত পরস্পর সমান হলে, সমানুপাতটিকে ক্রমিক সমানুপাত বলে। আবার, রাশি তিনটিকে ক্রমিক সমানুপাতী বলা হয়। যেমন, মনে করি, তিনটি রাশি যথাক্রমে ৩ কেজি, ৬ কেজি ও ১২ কেজি। এ রাশিগুলো দ্বারা দুইটি অনুপাত ৩:৬ এবং ৬:১২ গঠন করা যায়। এখানে ৩:৬::৬:১২ এ রকমের সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলা হয়।
লক্ষ করিঃ
- → ২য় রাশিকে ১ম ও ৩য় রাশির মধ্য সমানুপাতী বা মধ্য রাশি বলে।
- → ক্রমিক সমানুপাতের তিনটি রাশিই একজাতীয় বা সমজাতীয়।
মিশ্রণ: একাধিক জিনিস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। মিশ্রিত জিনিস গুলোকে বলা হয় মিশ্রণের উপাদান। যে কোন আনুপাতিক হারে উপাদান মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা যেতে পারে। যেমন, ১০ লিটার সিরাপের সঙ্গে ২ লিটার পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা যায়। তখন আমরা এই মিশ্রণকে বলি পানি মিশ্রিত সিরাপ। এ পানি মিশ্রিত সিরাপের মধ্যে সিরাপ ও পানির অনুপাত= ১০ লিটার:২ লিটার = ১০:২= ৫:১
সমানুপাতিক ভাগ: কোন একটি প্রদত্ত রাশিকে একাধিক নির্দিষ্ট সংখ্যার অনুপাতে ভাগ করাকে সমানুপাতিক ভাগ বলা হয়।
Post a Comment
0 Comments