প্রযুক্তি

Type Here to Get Search Results !

মঙ্গল গ্রহে ভূমিকম্প (মঙ্গলকম্প)

Marsquakes

মঙ্গল গ্রহে ভূমিকম্প (মঙ্গলকম্প)

গত ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সালে, NASA ইনসাইট ল্যান্ডার নামক মঙ্গলযান সফলভাবে মঙ্গল গ্রহের এলিসিয়াম প্লানিটিয়া অঞ্চলে অবতরণ করান। মঙ্গলগ্রহের সত্তরতম দিনের পর থেকে মিশনের অন্তর্ভুক্ত সিসমোমিটার ’SEIS’ মঙ্গল গ্রহের কম্পন রেকর্ড করতে শুরু করে।

নেতৃত্বে কারা:

অধ্যাপক ডোমেনিকো গিয়ার্ডিনির নেতৃত্বে ইটিএইচ (Swiss Federal Institute of Technology) জুরিখের গবেষক এবং প্রকৌশলীদের একটি দল, মঙ্গলের কম্পন রেকর্ড করার জন্য প্রেরিত SEIS নিয়ন্ত্রণ করছে। জুরিখের এই দলটি মঙ্গল গ্রহ থেকে প্রেরিত ডেটার দৈনিক সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও তদারকি করে।

মঙ্গল গ্রহরে এই অভিযানের প্রথম মাসের মিশনের ফলাফল নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।


মঙ্গল গ্রহের কম্পন গুলো:

InSight সেপ্টেম্বর, ২০১৯ এর শেষ অবধি ১৭৪টি ইভেন্ট রেকর্ড করেছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। মোট, ৪৫০ টিরও বেশি মার্স্ককম্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, যা এখনও বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি। এটি মঙ্গল গর্ভে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনার একটি গড় হিসাব।

সিসমিক তরঙ্গগুলো মঙ্গল গ্রহে কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আলোডন সৃষ্টি করে, এর অভ্যান্তরিন বৈশিষ্ট্য কি সে বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গবেষকদের ডাটাগুলো  পর্যবেক্ষণ করতে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

InSight অবতরণ করার আগে, গবেষকরা লাল গ্রহের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সম্ভাব্য মডেলের একটি বিস্তৃত পরিসর তৈরি করেছিলেন। জিওফিজিক্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা CSCS সুপার কম্পিউটার "পিজ ডাইন্ট"-এ ১০০ টিরও অধিক ভিন্ন ভিন্ন মডেলে পেশ করেন মঙ্গলে সিসমিক তরঙ্গ রেকর্ড করার জন্য। নতুন মডেল InSight এর সিসমোমিটার SEIS এর পাঠানো মঙ্গলকম্পনের ডেটা ইতিমধ্যে গবেষকদের মঙ্গল গ্রহের গঠন সম্পর্কে বোঝতে, পরিমার্জন করতে এবং অনিশ্চয়তা কমাতে সক্ষম করছে।


মার্সকম্প ঠিক আমাদের পৃথিবীর ভূমিকম্পের মতোই তবে পৃথবীর মতো বড় আকারের কম্পণ মঙ্গলে দেখা যায় না।

পর্যবেক্ষণ:

১৭৪টি নিবন্ধিত মার্সকম্পকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: একটিতে ৩ থেকে ৪ মাত্রার কম্পন যাদের মধ্যে ২৪টির কম-ফ্রিকোয়েন্সি ঘটনা আছে। লক্ষনিয় যে তরঙ্গগুলো মঙ্গলের আবরণের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। মঙ্গলকম্পনের দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে বাকি ১৫০টি ঘটনা যেগুলো সাধারনত ছোট মাত্রার, অগভীর হাইপোকেন্দ্রীয় এবং মঙ্গল ভূত্বকের মধ্যে আটকে থাকা উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ।

গিয়ার্ডিনির ব্যাখ্যায় বলেন, "মঙ্গলভূমির ভূত্বকের বিক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে ১০ থেকে ২০ মিনিটের দীর্ঘ সময়য়ের সংকেত রেকর্ড করা গেছে যা অ্যাপোলো যুগে চাঁদেও একই বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করা গেছে।"

তিনি বলেন, মঙ্গলকম্প ডেটা ব্যাখ্যা করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, দূরত্ব সনাক্ত করা সম্ভব কিন্তু কোন দিক থেকে তরঙ্গ আসছে তা নয়।

InSight মঙ্গল গ্রহের সিসমোলজির জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এর SEIS এর পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থা সত্ত্বেও এটি বৈজ্ঞানিকদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়ায় প্রতিদিন মাইনাস ৮০ থেকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং শক্তিশালী বাতাসের দোলনের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।

এই প্রচন্ড বাতাস InSight lander এবং এর যন্ত্রাংকে দিনের বেলায় ধাক্কা দেয়, যার ফলে উচ্চ স্বরে শব্দ হয় হয়। তবে সূর্যাস্তের সময় বাতাস শান্ত হয়ে যায় এবং এটাই সৌরজগতে সবচেয়ে শান্ত সিসমিক ডেটা রেকর্ড করার আদর্শ সময়। কাজেই SEIS দ্বারা মঙ্গল গ্রহে শনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ ভূমিকম্পের ঘটনাগুলি রাতেই রেকর্ড করেছে।

এই চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের কারনেই গবেষকদের ল্যান্ডারের নড়াচড়া, অন্যান্য যন্ত্র বা বায়ুমণ্ডলীয় বিপর্যয় থেকে উদ্ভূত সিসমিক ঘটনা এবং মঙ্গল গ্রহের ভূমির আলোড়ন দ্বারা সৃষ্ট সংকেতগুলো আলাদা করতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

আমরা এখন জানি যে SEIS একটি পাতলা, বালুকাময় স্তরে অবতরণ করেছে যা অবতরণ করার সময় কয়েক মিটার গভীর একটি গর্ত তৈরী করেছে। মূলত এটি হলো ২০ মিটার-প্রশস্ত একটি পুরাতন গর্ত। এই থেকে বুঝা যায় মঙ্গলভূমির ভূত্বকের বৈশিষ্ট্য অনেকটা পৃথিবীর উপরিভাগের স্ফটিকের সাথে তুলনীয়। তবে এর মাটি পৃথিবীর তুলনায় ভঙ্গুর বলে মনে হয়।

InSight ল্যান্ডার দ্বারা মঙ্গল গ্রহে স্থাপিত সিসমোমিটারটি এখন পর্যন্ত মঙ্গলের দুটি বৃহত্তম ভূমিকম্পের ঘটনা রেকর্ড করেছে: এদের মাধ্যে একটি ৪.২ মাত্রা এবং অপরটি ৪.১ মাত্রার মঙ্গকম্প। এই মার্সকম্প রেকর্ড করা আগের কম্পন থেকে পাঁচগুণ শক্তিশালী। তবে এখন পর্যন্ত InSight এর অবতরণ স্টেশনের আশেপাশে কোন ধরনের ঘটনা রেকর্ড করতে পারেনি InSight.

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আনা হরলেস্টন এবং তার সহকর্মীরা S0976a নামক ৪.২ মাত্রার কম্পন থেকে প্রতিফলিত পিপি এবং এসএস তরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম হন বালে জানন। এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে মঙ্গলের ভ্যালেস মেরিনারিস। তাদের মতে, এটি একটি বিশাল ক্যানিয়ন নেটওয়ার্ক যা মঙ্গলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি এবং সৌরজগতের বৃহত্তম গ্র্যাবেন সিস্টেমগুলির মধ্যে একটি।

এর আগে রেকর্ডকৃত বৃহত্তম কম্পনের ৩টি ঘটনা প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে সার্বেরাস ফোসাই নামক অঞ্চলে ঘটেছিল যাদের মাত্রা ছিল ৪ এর কাছাকাছি। মঙ্গলকম্প একটি টেকটোনিক গ্র্যাবেন সিস্টেম, মূলত এলিসিয়াম প্ল্যানিটিয়া এলাকার সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি, এলিসিয়াম মনসের ওজনের কারণেই এই মঙ্গলকম্পগুলো ঘটেছিল।

SEIS কার্যত মঙ্গলকম্পের উপর নজর রাখছে না এটি মঙ্গল গ্রহে আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ডেটা প্রেরণ করছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.