দলিলে লিখিত অনেক শব্দ আছে,যার সংক্ষিপ্ত রুপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমনও কিছু শব্দ আছে যা খুব কম ব্যবহার হয়। যারা পুরাতন দলিলের ব্যবহৃত শব্দের অর্থ বোঝেন না, তাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. মৌজা: গ্রাম।
২. জে.এল নং: মৌজা নং/গ্রাম নম্বর।
৩. ফর্দ: দলিলের পাতা।
৪. খং: খতিয়ান।
৫. সাবেক: আগের/পূর্বের বুজায়
৬. হাল: বর্তমান।
৭. বং: বাহক, অর্থাৎ যিনি নিরক্ষর ব্যক্তির নাম লিখে।
৮. নিং: নিরক্ষর।
৯. গং: আরো অংশীদার আছে।
১০. সাং: সাকিন/গ্রাম।
১১. তঞ্চকতা: প্রতারণা।
১২. সনাক্তকারী: যিনি বিক্রেতাকে চিনে।
১৩. এজমালী: যৌথ।
১৪. মুসাবিদা: দলিল লেখক।
১৫. পর্চা: বুঝারতের সময় প্রাথমিক খতিয়ানের যে নকল দেওয়া হয় তাকে পর্চা বলে।
১৬. বাস্তু: বসত ভিটা।
১৭. বাটোয়ারা: বন্টন।
১৮. বায়া: বিক্রেতা।
১৯. মং: মবলগ/মোট
২০. মবলক: মোট।
২১. এওয়াজ: সমপরিমাণ কোন কিছু বদলে সমপরিমাণ কোন কিছু বদল করাকে এওয়াজ বলে।
২২. হিস্যা: অংশ।
২৩. একুনে: যোগফল।
২৪. জরিপ: পরিমাণ।
২৫. এজমালী: কোনো ভূমি বা জোতের একাধিক শরীক থাকিলে তাহাকে এজমালী সম্পত্তি বা এজমালী জোত
বলে।
২৬. চৌহদ্দি: সীমানা।
২৭. সিট: নকশার অংশ বা মৌজার অংশের নকশাকে সিট বলে।
২৮. দাখিলা: খাজনার রশিদ।
২৯. নক্সা: ম্যাপ।
৩০. নল: জমি পরিমাপের নিমিত্তে তৈরী অংশ দণ্ড।
৩১. নাল: চাষাবাদের উপযোগী ভূমি।
৩২. পিং: পিতা।
৩৩. জং: স্বামী।
৩৪. দাগ নং: জমির নম্বর।
৩৫. এতদ্বার্থে: এতকিছুর পর।
৩৬. স্বজ্ঞানে: নিজের বুঝ মতে।
৩৭. সমূদয়: সব কিছু।
৩৮. ইয়াদিকৃত: পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করিলাম।
৩৯. পত্র মিদং: পত্রের মাধ্যমে।
৪০. বিং: বিস্তারিত।
৪১. দং: দখলকার।
৪২. পত্তন: সাময়িক বন্দোবস্ত।
৪৩. বদল সূত্র: এক জমি দিয়া অন্য জমি গ্রহণ করা।
৪৪. মৌকুফ: মাপ।
৪৫. দিশারী রেখা: দিকনির্দেশনা।
৪৬. হেবা বিল এওয়াজ: কোন জিনিসের পরিবর্তে ভূমি/জমি দান করাকে হেবা বিল এওয়াজ বলে।
৪৭. বাটা দাগ: কাটা দাগ এটি ভগ্নাংশ আকারে থাকে, যার উপরের সংখ্যা আগের দাগ এবং নিচের সংখ্যা
এই দাগের বাটা।
৪৮. অধুনা: বর্তমান।
৪৯. রোক: নগদ।
৫০. ভায়া: বিক্রেতার পূর্বের ক্রয়কৃত দলিল।
৫১. দান সূত্র: কোনো ভূমি দলিল মূলে দান করিলে দান গ্রহণকারী দান সূত্রে ভূমির মালিক বলিয়া
গন্য হয়।
৫২. দাখিল খারিজ: কোনো জোতের ভূমি ও জমা হইতে কতেকাংশ ভূমির খরিদ্দার ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত
ব্যাক্তিকে পৃথকভাবে নাম জারি করিয়া দিলে তাহাকে দাখিল খারিজ বলে।
৫৩. তফসিল: তালিকা, কোনো দলিলের নিম্নভাগে লিখিত সম্পত্তির তালিকাকে তফসিল বলে।
৫৪. খারিজ: যখন কোনো সরকার বা জমিদার কোনো প্রজাকে তাহার অংশীদারের জমা হইতে পৃথকভাবে খাজনা
দিবার অনুমতি দেন তখন তাহাকে খারিজ বলে।
৫৫. খতিয়ান: প্রত্যেক মৌজার এক বা একাধিক ভূমির জন্য একত্রে যে রেকর্ড সৃষ্টি করা হয় তাহাকে
খাতিয়ান বলা হয়। খতিয়ানে তৌজি নম্বর, পরগনার
নাম, জে.এল বা গ্রামের নাম, খতিয়ান নম্বর, স্বত্ত্বের বিবরণ মালিকের নাম, তাহার পিতা
ও গ্রামের নাম, দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমানা, ভূমির প্রকার অর্থাৎ (ডাঙ্গা,
ধানী, ডোবা, পতিত, গর্ত, হালট, ইত্যাদি) দখলকারের নাম, ভূমির ষোল আনা পরিমাণ, হিস্যা
ও হিস্যা মত পরিমাণ একর লিখিত থাকে।
৫৬. জরিপ: সাধারণত কর নির্ধারণ ভিত্তিতেই এই সার্ভে করা হইয়া থাকে।
৫৭. এওয়াজ সূত্র: সমপরিমাণ কোনো ভূমি বা জিনিসের বদলে সমপরিমাণ কোনো ভূমি বা জিনিস প্রাপ্ত
হইলে তাহাকে এওয়াজ সূত্রে প্রাপ্ত বলা হয় ইহাকে বদল সূত্রও বলে।
৫৮. অছিয়তনামা: যদি কোনো ব্যাক্তি মৃত্যুর পূর্বে তাহার ওয়ারিশ বা আত্বীয় স্বজনকে তার স্থাবর-
অস্থাবর সম্পত্তির বাটোয়ারা সম্পর্কে দলিল মূলে কোনো নির্দেশ দিয়া যান তবে তাহাকে অছিয়তনামা
বলে। মৃত্যুর পর উক্ত অছিয়ত প্রবলের জন্য জেলা জজ সাহেব হইতে অনুমতি লইতে হয় হিন্দু
ধর্মে উহাকে উইল বলে।
৫৯. তফসিল: বিক্রিত জমির তালিকা।
৬০. নামজারী: অন্যান্য অংশীদার থেকে নিজের নাম খতিয়ানে খোলাকে নামজারী বলে।
৬১. অধীনস্থ স্বত্ত্ব: উপরিস্থিত স্বত্ব বা জমিদারী স্বত্বের অধীনে কোনো স্বত্ত্ব সৃষ্টি করিলে তাহাকে অধীনস্থ স্বত্ত্ব বা নীচস্থ স্বত্ত্ব বলে।
৬২. আলামত: ম্যাপের মধ্যে গাছপালা, বাড়ীঘর, মন্দির, মসজিদ, গোরস্থান, জলভূমি, ইত্যাদি বুঝাইবার
জন্য ব্যবহৃত চিহ্নকে আলামত বলে।
৬৩. আমলনামা: কোনো ব্যক্তি অন্যের নিকট হইতে কোনো ভূমি নিলাম বা খোস – খরিদ করিয়া ভূমিতে
দখল লওয়ার যে দলিল প্রাপ্ত হয় তাহাকে আমনামা বলে।
৬৪. আসলি: মূল ভূমি।
৬৫. আধি: উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক ভূমির মালিক, অর্ধেক প্রজায় রাখিলে তাহাকে আধি বা বর্গ বলে।
৬৬. ইজারা: ঠিকা। নির্দিষ্ট খাজনায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তালুক বা মহলাদির বন্দোবস্ত দেওয়া
বা নেওয়া।
৬৭. ইয়াদদন্ত: স্মারকলিপি।
৬৮. ইন্তেহার: ঘোষণাপত্র।
৬৯. এস্টেট: ১৭৯৩ সালে সরকার বাহাদুর যে সমস্ত মহাল স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দিয়াছেন তাহাদিগকে
জমিদারী বা এস্টেট বলে।
৭০. ওয়াকফ: ধর্মীয় কাজের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে উৎসর্গকৃত সম্পত্তি।
৭১. কিত্তা: চারিটি আইন দ্বারা বেষ্টিত ভূমি খন্ডকে এক একটি কিত্তা বা পট বলে।
৭২. কিস্তোয়ার জরিপ: গ্রামের অন্তর্গত জমিগুলো কিত্তা কিত্তা করে জরিপ করার নাম কিস্তোয়ার
৭৩. কিস্তি: নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী টাকা দিবার অঙ্গীকার বা ব্যবস্থা।
৭৪. কায়েম স্বত্ত্ব: চিরস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া ভূমিকে কায়েম স্বত্ত্ব বলে।
৭৫. কবুলিয়ত: মালিকের বরাবরে স্বীকারোক্তি করিয়া কোনো দলিল দিলে তাহাকে বকুলিয়ত বলে। কবুলিয়াত
নানা প্রকার। যথা- রায়তি, দর রায়তি, কোর্ফা ও আদি বর্গা কবুলিয়াত।
৭৬. কটকোবালা: সুদের পরিবর্তে মহাজনের দখলে জমি দিয়া টাকা কর্জ করত: যে দলিল দেওয়া হয় তাহাকে
কটকোবালা বল।
৭৭. কান্দা: উচ্চ ভূমি। গোবামের সন্নিকটস্থ ভূমিকেও কান্দা বলে।
৭৮. কিসমত: মৌজার অংশকে কিসমত বলে।
৭৯. কোলা ভূমি: বসত বাড়ীর সংলগ্ন নাল জমিকে কোলা ভূমি বলে।
৮০. কোল: নদীর কোনো ছোট অংশ তাহার প্রধান স্রোতের সহিত বা হইতে সংযুক্ত হইয়া গেলে তাহাকে
কোল বলে।
৮১. খানাপুরী: প্রাথমিক স্বত্ত্ব লিপি। ইহা রেকর্ড অব রাইটস তৈরির ধাপ। খসড়া ও খতিয়ানের
কলাম বা ঘর পূরণ করাই ইহার কাজ।
৮২. খামার: ভূম্যধিকারী খাস দখলীয় ভূমিকে খামার, খাস-খামার, নিজ জোত বা কমত বলে।
৮৩. খাইখন্দক: ডোবগর্ত, খাল, নালা ইত্যাদি চাষের অযোগ্য ভূমিকে খাইখন্দক বলে।
৮৪. খিরাজ: কর, খাজনা।
৮৫. খানে খোদা: মসজিদ।
৮৬. খসড়া: জমির মোটামুটি বর্ণনা।
৮৭. গর বন্দোবস্তি: যে জমির কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হয় নাই।
৮৮. গরলায়েক পতিত: খাল, নালা, তীরচর, ঝাড়, জঙ্গল ইত্যাদি অনাবাদি ভূমিকে গরলায়েক পতিত বলে।
৮৯. গির্বি: বন্ধক।
৯০. চক: থক বসত ম্যাপের এক একটি পটকে চক বলে।
৯১. জমা বন্দী: খাজনার তালিকা।
৯২. চাকরাণ: জমিদার বাড়ীর কাজ-কর্ম নির্বাহ করণার্থে ভোগ-দখল করিবার নিমিত্তে যে জমি দেওয়া
হয় তাহাকে চাকরাণ বলে।
৯৩. চাঁদা: জরিপ কার্যে নির্দিষ্ট করা স্টেশনকে চাঁদা বলে।
৯৪. চটান: বাড়ীর সন্নিকটস্থ উচ্চ পতিত স্থানকে চটান বলে।
৯৫. চালা: উচ্চ আবাদি ভূমি (পুকুরের পাড় ইত্যাদি)
৯৬. চর: পলিমাটি গঠিত ভূমি।
৯৭. জবর-দখল: জোরপূর্বক দখল।
৯৮. জমা: এক বা একাধিক ভূমির জন্য একত্রে যে খাজনা দেওয়া হয় তাহাকে এক একটি জমা বলে।
৯৯. জোত: এক প্রকার প্রজাস্বত্ত্ব।
১০০. জজিরা: নাব্য নদীতে যে দ্বীপ গঠিত হয় তাহাকে জজিরা বলে।
১০১. জায়সুদী: হস্তান্তরকরণ ক্ষমতা ব্যতীত কিয়ং কালের জন্য বন্ধক। অর্থাৎ মহাজনের নিকট বন্ধক
দিয়া যদি এই মর্মে টাকা কর্জ করা যায়, যে যতদিন পর্যন্ত আসল টাকা পরিশোধ না হইবে ততদিন
পর্যন্ত মহাজন উক্ত জমি ভোগ-দখল করিতে থাকিবেন, তবে তাহাকে জায়সুরি বলে।
১০২. জালি: এক প্রকার ধান যাহা জলাভূমিতে জন্মে।
১০৩. টেক: নদী ভগ্নস্থান ভরাট হইয়া যে পয়স্তি উৎপন্ন হয় তাহাকে টেক বলে।
১০৪. টাভার্স: ঘের জরিপ।
১০৫. ঠিকা রায়ত: নির্দিষ্ট মেয়াদে সাময়িকভাবে দখলকারকে ঠিক রায়ত বলে অথবা যে রায়তের কোনো
দখলি স্বত্ত্ব নেই।
১০৬. ঢোল সহরত: কোনো ক্রোক, নিলাম ইস্তেহার বা দখলি পরওয়ানা সরজমিনে ঢোল পিটাইয়া জারি করাকে
ঢোল সহরত বলে।
১০৭. তামিল: আদেশ মোতাবেক রেকর্ড সংশোধন করা।
১০৮. তামাদি: খাজনা আদায় করার নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হইলে তাহাকে তামাদি বলে।
১০৯. তুদাবন্দী: সীমানা নির্দেশ।
১১০. তহশিল: খাজনাদি আয়ের নিমিত্ত নির্দিষ্ট এলাকাকে তহশিল বলে।
১১১. তলবানা: সমন জারির সময় পিয়নকে প্রদত্ত ফিস।
১১২. তলববাকী: বকেয়া খাজনা আদায়ের কিস্তি।
১১৩. তালুক: নিম্নস্থ স্বত্ত্ব।
১১৪. তরমিম: শুদ্ধকরণ।
১১৫. তরতিব: শৃংখলা।
১১৬. তৌজি: ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় ভূমির জন্য কালেক্টরীতে যে রেজিষ্ট্রী বই থাকে
তাহাকে তৌজি বলে। প্রত্যেক তৌজির ক্রমিক নম্বর থাকে। জমিদারের অধীন প্রজার জোতকেও তৌজি
বলা হয়।
১১৭. দিয়ারা: পলিমাটি দ্বারা গঠিত চর।
১১৮. দর পত্তনী: পত্তনীর অধীন।
১১৯. দখলী স্বত্ত্ব বিশিষ্ট প্রজা: দখলদার হিসেবে যে প্রজার স্বত্ত্ব আছে।
১২০. দশসালা বন্দোবস্ত: দশ বৎসরের মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়াকে দশসালা বন্দোবস্ত বলে।
১২১. দিয়ারা: পলিমাটি দ্বারা গঠিত চর।
১২২. দাগ নম্বর: মৌজা নকশায় প্রত্যেক প্লটের যে সিরিয়াল নম্বর বসান হয়,তাহাকে দাগ নম্বর
বলে।
১২৩. দরবস্ত: সমুদয়।
১২৪. নথি: রেকর্ড।
১২৫. দেবোত্তর: দেবতাদিগকে প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি।
১২৬. দেবিচর: যে সকল বালুচর সাধারণ জোয়ারের পানিতে ডুবিয়া যায় তাহাদিগকে দেবিচর বলে।
১২৭. দিঘলি: নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা আদায়কারী একপ্রকার প্রজা।
১২৮. নক্সা ভাওড়ন: পূর্ব জরিপ অনুসারে গ্রামের সীমাগুলো এখন আর ঠিক মতো পাওয়া যায় না। ফলে
সীমানা লইয়া প্রায়ই জমিদারের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। পূর্বের ফিল্ডবুক অনুসারে প্রত্যেক
লাইনের মাপ ও বিয়ারিং লইয়া, লাইনটি প্রথমে যেখানে যেভাবে ছিল, তা চিহ্নিত করিয়া, কোন
জমি কোন মৌজার অন্তর্গত,তাহা ঠিক করার নামই,নক্সা
ভাওড়ান বা রিলেইং বাউন্ডারীজ।
১২৯. নামজারী: ভূম্যধিকারী সরকারের সাবেক নামের পরিবর্তে খরিদ্দার অথবা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত
ব্যক্তির নাম রেজিস্ট্রী করাকে নামজারী বলে।
১৩০. নাম খারিজ বা জমা খারিজ: ১৬ আনা জোতার মোট জমা হইতে নামজারীকৃত ওয়ারিশ বা খরিদ্দারের
দখলীয় জমির জমা ১৬ আনা জোতার জমার হার অনুসারে জাম ভাগ করিয়া দিয়া পৃথক জমা সৃষ্টি
করাকে নাম খারিজ বা জাম খারিজ বলে।
অষ্টমী তালুক বলতে কি বুঝায়? শব্দটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন দলিলে ব্যবহৃত হয়েছে।
ReplyDelete