তারিখ
: ২৯ জুন, ২০২১
বরাবর,
প্রধান
শিক্ষক
সরকারি
উচ্চ বিদ্যালয় ।
বিষয়ঃ বিশ্ব সভ্যতা বিকাশে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার ভূমিকা বিষয়ক প্রতিবেদন।
জনাব,
বিনীত
নিবেদন এই যে, ২৮ জুন,২০২১ তারিখে প্রকাশিত আপনার আদেশ যাহার স্মারক ম. ম.স.উ.বি.-০৬/
২০২১ অনুসারে “বিশ্ব সভ্যতা বিকাশে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার ভূমিকা বিষয়ক প্রতিবেদনটি
নিম্নে পেশ করছি।
বিশ্ব সভ্যতা বিকাশে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার ভূমিকা
গ্রিক সভ্যতা
ভূমিকাঃ
পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকে নানা উত্থান-পতনের মানব সভ্যতা আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
আর এ কারণে মানব সভ্যতার বিকাশ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। আজ থেকে
আনুমানিক প্রায় দশ হাজার বছর পূর্বে শিকারি সমাজ থেকে ভিত্তিক সমাজ এর উদ্ভব ঘটে।
মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার বছর পূর্বে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা সৃষ্টি করে। কৃষিভিত্তিক
সমাজ গড়ে ওঠার ফলে কৃষিজীবী, পশুপালন ও শিকারি এ দুই ভাগে মানব সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ফলে কৃষক ও পশুপালক সমাজের মানুষেরা বহুবিধ উন্নত কর্মকৌশল আবিষ্কার করতে থাকে এবং
মানুষ স্থায়ীভাবে গ্রামে বসবাসও শুরু করে । সকল আবিষ্কার একের পর এক ঘটেছিল পশ্চিম
এশিয়া, ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষে পূর্ব ইউরোপ ও তৎসংলগ্ন উত্তর আফ্রিকায়। যার ফলে পশ্চিম
এশিয়ায় মেসোপটেমিয়া পূর্ব ইউরোপের নিম্ন বলকান অঞ্চল ও মিশরের প্রথম নগরকেন্দ্রিক
সভ্যতা উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। আধুনিক মানব সমাজ এ সকল সভ্যতার নিকট ঋণী।
গ্রিক
সভ্যতা গ্রিক সভ্যতার উৎপত্তি স্থলঃ ইউরোপ মহাদেশের গ্রিক রাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রাচীন
কয়েকটি শহরকে কেন্দ্র করে গ্রীক সভ্যতার উদ্ভব ঘটে।বলকান উপকূলের দক্ষিণাংশ অবস্থিত
গ্রিক প্রায় পাচঁ হাজার বর্গমাইল ব্যাপী বিস্তৃত। ভূ-প্রকৃতি এই দেশটিকে তিনভাগে বিভক্ত
করে দিয়েছে,দক্ষিণ গ্রীস, মধ্য গ্রীস ও উত্তর গ্রীস। মেসিডোনিয়ান অধিপতি আলেকজান্ডারের
শাসনামলে সভ্যতা সীমা ছাড়িয়ে আধুনিক মিশর, ইসরাইল,ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক
ও ইরান হয়ে ভারত বর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
গ্রীকদের
রাজনৈতিক ইতিহাসঃ প্রাচীন গ্রিক সমাজের বিশেষত্ব দাসপ্রথা, গ্রিকদের আগে আর কোন সমাজই
দাসত্বের বুনিয়াদে উপরে গড়ে উঠে। নাই ।গ্রীকদের আদি বাসস্থান গ্রিসে নয়। গ্রিসে
আসার পূর্বে তারা থিসালি ও এপিরাসে বাস করত। গ্রীক সভ্যতার সূচনা কাল থেকে পতন পর্যন্ত
এর রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে, এ সভ্যতা কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১।
হেলেনিক যুগ।
২। হেলেনিস্টিক যুগ
গ্রীক দর্শন ও সংস্কৃতিঃ পৃথিবীব্যাপী সভ্যতার ইতিহাসে গ্রীক দর্শন গোটা বিশ্ব দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। জ্ঞানের জগতে যে সকল গ্রিক কবি দার্শনিক জ্ঞানের আলোক বর্তিকা বিতরণ করেছেন তাদের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত শিক্ষাগুরু সক্রেটিস। সক্রেটিসের ছাত্র প্লেটো ও প্লেটো এর ছাত্র এরিস্টোটল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রীক দার্শনিকদের যুক্তি,ব্যাখ্যা ও দর্শন জগতকে সমৃদ্ধশালী করে। সকল যুক্তি বাদী দার্শনিকদের সফিস্ট বলা হয় ।গ্রীক দর্শনে অন্যতম দার্শনিক সক্রেটিস নিজের সত্য প্রকাশে অনড় থেকে শাসকের নির্দেশে বিষপান করে মৃত্যুবরণ করেন। তার বিখ্যাত উক্তি নিজেকে জানো। তার শিষ্য প্লেটো এবং প্লেটো শিষ্য অ্যারিস্টোটলের সর্বকালের বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন। প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ। সিম্পোজিয়াম রিপাবলিক এবং লজ প্রভৃতি। এরিস্টটলের বিখ্যাত গ্রন্থ লজিক, ফিজিকস এবং পলিটিক্স। পলিটিক্স গ্রন্থে রাজনীতি, গণতন্ত্র বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে। প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ দি রিপাবলিক। আর বিশ্ববিজেত্য আলেকজান্ডার নিজেও একজন দার্শনিক ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তার শিক্ষক ছিলেন দার্শনিক প্লেটো।
গ্রিক
সাহিত্যঃ হোমারের যুগে গ্রিক সাহিত্যের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। যদিও হোমারের সাহিত্য
নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসিতে গ্রীকদের বীরত্বের কাহিনী
বর্ণিত হয়েছে। হোমারিকযুগের পরে গ্রিক সমাজে গীতিকাব্য ও শোক গাথার আবির্ভাব ঘটে।
এই সকল শোক গাথায় ব্যক্তিগত প্রণয় কাহিনীর বিবরণ রয়েছে। সোলোন ছিলেন একজন বিখ্যাত
গীতিকাব্য রচয়িতা। এছাড়া বিখ্যাত নাট্যকার ছিলেন এসকাইলাস, সোফোক্লিস, ইউরিপিডিস
প্রমুখ। ১ // ১
গ্রিক
ইতিহাসঃ ইতিহাসের জনক ছিলেন গ্রীসের বিখ্যাত ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (৪৮৪-৪২৫খ্রিষ্টপূর্ব)
ইতিহাস শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হিস্ট্রি শব্দটি গ্রিক ভাষার শব্দ। তিনি মিশর, পারস্য
ও ইতালি ভ্রমণ করে ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান ও তথ্য সংগ্রহ করেন। এছাড়া জেনোফার নামে
এক ব্যক্তি ইতিহাস সংগ্রহে খ্যাতি অর্জন করেন। গ্রিক বিজ্ঞান বিজ্ঞান সাধনায় হেলেনিস্টিক
যুগেও অসাধারণ উৎকর্ষ সাধিত হয়। সেসময় ইতিহাস গবেষণায় পলিবিয়াস, জ্যোতির্বিদ্যায়
অ্যারিস্টোটল ও হিপারকাস, গণিতে বিখ্যাত পিথাগোরাস ও ইউক্লিড প্রমুখ মুনিষীগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের
চর্চা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
রোমান সভ্যতা
রোমান
সভ্যতার উৎপত্তিঃ গ্রীক সভ্যতার সমসাময়িক রোমান সভ্যতা হেলেনিক ও হেলেনিস্টিক সভ্যতার
অনেক সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। ঐতিহাসিকদের ধারণা, ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোম নগরী প্রতিষ্ঠিত
রাজা রোমুলাস এর নামানুসারে রোম নগরীর নামকরণ করা হয়। টাইবার নদীর তীরে অবস্থিত
প্রাচীন রোমান নগরীকে ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলা হয়। কারণ রোমনগরীর
সঙ্গে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিস্তৃত যোগাযোগ ছিল। রোমিও সমাজ ও সংস্কৃতির
প্রভাব ভূমধ্যসাগরের অঞ্চলসহ উত্তর ব্রিটেন, জার্মানি, পূর্বে মেসোপটেমিয়া এবং দক্ষিনে
মিশর ও লিবিয়া এ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের রােমানদের অবদান
রোমিও
সাহিত্যঃ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় রােমানরা গ্রিকদের অনুকরণে রচনা করেন। প্লুটাক ১২
টি নাটকের মাধ্যমে রোমের আচরণ ও কৃষ্টির আলোকপাত করেন। রোমিও সাহিত্যে নাটকের ভূমিকা
ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। গীতিকাব্যকার ক্যাটুলাস ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া সিসিরো এবং
ভার্জিল সাহিত্যচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেন।
রোমান ধর্মঃ তাদের গৃহ ছিল ধর্ম ও দেবদেবীর আখড়া। প্রত্যেক গৃহে জেনাস নামে একজন তত্ত্বাবধায়ক দেবতা ছিল। এছাড়া ভেস্তা আগুনের দেবতা,সাটান ফসলের দেবতা, জুনো গর্ভবতী হওয়ার দেবতা, নেপচুন সাগরের দেবতা, ভেনাস প্রেমের দেবতা, জুপিটার আকাশের দেবতা ছিল।
রোমান
দর্শনঃ রোমানরা দর্শনের ক্ষেত্রেও গ্রিক প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। গ্রীক দর্শন এর
উপর ভিত্তি করে রোমান দর্শনের সূত্রপাত। বিশ্ব সভ্যতার রোমান দার্শনিকদের অবদান অপরিসীম।
পশ্চিমের সক্রেটিস নামে কেটো খ্যাত ছিলেন আদি রোমান দার্শনিক। তার মতে, গ্রীক সভ্যতা
নয়, রোমান সভ্যতাই সভ্য পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তার করবে। তিনি সক্রেটিসের যুক্তি
জ্ঞান ও নৈতিকতা শৃঙ্খলা ভক্ত ছিলেন।
রোমান সাম্রাজ্যের পতনঃ খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকেইতালি”EM কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। রোম এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে সবহারা দল ভিড় করে। রোমের দাসমালিকরা গর্বের সঙ্গে বলতো রোমের ক্ষমতা চিরস্থায়ী। তাদের শক্তিমান রক্ষীবাহিনীর বিশাল সেনাবাহিনী অপরাজেয় কিন্তু সে শক্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জার্মান ও পারসিকরা একেকটি রোমান সাম্রাজ্য প্রদেশ গুলি দখল করতে থাকে। যারা কয়েক শতাব্দী ব্যাপী অন্যদের দাস বানিয়েছে আজ তারাই দাসে পরিণত হয়।
উপসংহারঃ গ্রীক সভ্যতার কাছে আধুনিক বিশ্ব বিভিন্নভাবে ঋণী। এথেন্স রাজনৈতিক উৎকর্ষ সাধনে অগ্রজের ভূমিকা পালন করেছে। সর্বসাধারণের মত প্রকাশের সুযোগ দিলে যে রাষ্ট্রের কল্যান হয়, তা গ্রীক সভ্যতার প্রমাণিত। এছাড়া দর্শন বিজ্ঞান ভাস্কর্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রীকদের অবদান। অবিনশ্বর। বিশ্ববাসীর যত সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করুক না কেন, শিকড়ের সন্ধান খুঁজতে গিয়ে গ্রীক সভ্যতায় অবশ্যই যেতে হবে। গ্রীষ্মের অলিম্পিক খেলা সরাসরি আধুনিক বিশ্ব কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। তেমনিভাবে রোমান সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান নিদর্শন কলাকৌশল চিন্তা ধারা আজও বিলুপ্ত হয়নি। রোমান সাহিত্য মধ্যযুগের ইউরোপ জ্ঞানচর্চার পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিবেদন
তৈরির তারিখঃ ২৯ জুন,২০২১
প্রতিবেদকের
নাম ও ঠিকানাঃ
প্রতিবেদন
প্রাপকের নাম ও ঠিকানাঃ
Class 9 History and World Civilization Assignment Answer 2021
সতর্কতাঃসকল ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট নিজে লেখা উচিত। কপি বা গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট লিখে জমা দিলে অ্যাসাইনমেন্ট বাতিল বলে গণ্য হবে।(alert-error)
Post a Comment
0 Comments