লক্ষ্যযখন ব্যাংক, প্রস্তুরি প্রথম পাঠ: নজমুল হুদা
ব্যাংকে নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন পর্বে হয়। প্রথম পর্বে MCQ, তারপর লিখিত, সর্বশেষ পর্বে ভাইভা। ব্যাংকভেদে পরীক্ষার সময় ও নম্বর বণ্টনে তারতম্য দেখা যায়। প্রশ্নের ধরন কিছুটা ভিন্ন হলেও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পড়াশোনা প্রায় একইরকম।
ব্যাংক
ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় শ-খানেক। দেশে প্রতিবছর লাখো
তরুণ উচ্চশিক্ষার পথ পাড়ি দিয়ে চাকরির বাজারে ঢোকার চেষ্টা করছে। তাদের কর্মসংস্থানের
বড় জায়গা এসব প্রতিষ্ঠান। তরুণদের একটি বড় অংশের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকিং
ক্যারিয়ার।
বাংলাদেশের
বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং পেশা নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়; চমকপ্রদ। যেকোনো
বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের ব্যাংকগুলোতে দ্রুত নিয়োগ, মানসম্মত বেতন ও শীর্ষপদে যাওয়ার
সুযোগসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার গড়তে তরুণদের প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। এ ছাড়া ব্যাংকারদের
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, সুশৃঙ্খল পরিপাটি জীবনাচরণও অনেকের কাছে আকর্ষণীয়।
শুধু
ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ই নয়, বিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশলসহ
বিভিন্ন বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা তরুণরাও ক্রমেই ঝুঁকছে ব্যাংক বা অন্যান্য
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে। তবে পড়াশোনার বিষয় ভিন্ন হলেও ব্যাংকিং বুঝে নিতে সময়
লাগে না। তাছাড়া, দেশে- বিদেশে পেশা সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার সুযোগ তাত্ত্বিক
জ্ঞান ও পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে বেশ সহায়ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের (নবম
গ্রেডের) একজন স্থায়ী কর্মকর্তা ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক
ম্যানেজমেন্ট (BIBM) থেকে এমবিএম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ
হতে এমডিএস বা আইবিএতে এক্সিকিউটিভ এমবিএ করার সুযোগ পায়। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থার
বৃত্তির আওতায় দেশের বাইরে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে বা শিক্ষা ছুটিতে উচ্চতর
পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে পারে । দেশে-বিদেশে আরও কিছু স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে
দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পেশা সংশ্লিষ্ট কোর্স করা যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর
অন্যান্য দেশেও শাখা আছে।
ভালো
কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে এসব বৈদেশিক শাখাতেও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে । গত
দু-এক দশকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে ব্যাংকিং খাত আরও বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে উঠেছে। একইসাথে নিয়োগ বেড়েছে। চাকরি প্রার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ
। বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক, অফিসার, ডাটা কন্ট্রোল অফিসারসহ বেশকিছু বিশেষায়িত
পদ যেমন- আইটি, লাইব্রেরি, গবেষণা, পরিসংখ্যান বিভাগে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর চাহিদার নিরিখে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি মূলত,
অফিসার ও সিনিয়র অফিসার পদের জন্য সদ্য স্নাতকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে বিশেষায়িত পদেও জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারি
ব্যাংকগুলোর নিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন যেকোনো বিষয়ে পড়ালেখা করেই আবেদনের সুযোগ পাওয়া
যায়, তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মূলত, ব্যবসায় ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের
প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইংরেজি, পরিসংখ্যান, গণিত, উন্নয়ন অধ্যয়নসহ আরও কিছু
বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকভেদে Management
Trainee Office (MTO), Probationary Officer (PO), IT Officer, Cash Officer প্রভৃতি
পদে বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিয়োগ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত,
বিশেষায়িত এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষায় কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
এ
প্রক্রিয়া সাধারণত তিন ভাগে হয়। প্রথম ধাপটি নকআউটভিত্তিক। বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর
বা এমসিকিউ পর্বে টিকলেই কেবল লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। সাধারণত দুটি অংশের
পরীক্ষা আলাদাভাবেই হয়।
ব্যাংকভেদে
পরীক্ষার সময় ও নম্বর বণ্টনে তারতম্য দেখা যায়। প্রশ্নের ধরন কিছুটা ভিন্ন হলেও প্রস্তুতির
ক্ষেত্রে পড়াশোনা প্রায় একইরকম। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি অংশে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার
ও তথ্য- প্রযুক্তি অংশ থেকে সাধারণত ৮০টি প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রে ভুল উত্তরের জন্য
নম্বর কর্তন করা হয় বিধায় বাড়তি সময় সচেতনতা, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, মনোযোগ ও
মনোবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে রচনা, সংক্ষিপ্ত অনুবাদ,
প্যাসেজ থেকে প্রশ্নোত্তর, ভুল সংশোধনের ওপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এ অংশে ভালো করার
জন্য অন্তত একটি ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা নিয়মিত পড়ার অভ্যাস থাকলে কাজে আসে। বিশেষ
করে অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতা এবং সাম্প্রতিক কলামগুলো নিয়মিত পড়লে বিশ্লেষণ
সক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া, দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি), রপ্তানি ধারা, প্রবাসী আয়
বা রেমিটেন্স, রিজার্ভ, কৃষি পরিস্থিতি, দারিদ্র্য হ্রাস, শ্রমবাজার, বিনিয়োগ পরিস্থিতি
প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র, প্রয়োজনীয় তথ্য টুকে রাখলে সব ক্ষেত্রেই কাজে আসে।
-লেখক,
পেশাপরামর্শক ও উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
Post a Comment
0 Comments