মালবাহী জাহাজ ভেসে এসেছে বাংলাদেশে - জাহাজটির পরিচয় নিয়ে যা জানা গেলো
বাংলাদেশের উপকূলীয় দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ভেসে আসা একটি মনুষ্যবিহীন জাহাজ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। জাহাজটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এনিয়ে অনেকে নানা মন্তব্য করছেন।
শুধুমাত্র ফেসবুকেই নয়, স্থানীয়দের
অনেকেই এটিকে ‘ভূতুড়ে জাহাজ’ বলছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে নৌযানটি
যে নাবিকরাই বাংলাদেশে এনেছিল তা নিশ্চিত হওয়া গেলেও এটি কীভাবে ভূতুড়ে জাহাজে পরিণত
হলো এনিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
কোস্টগার্ড জানাচ্ছে সোমবার
বেলা আনুমানিক ১২টায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ছেড়া দ্বীপ অংশে জাহাজটিকে ভিড়তে দেখা
যায়। সাইক্লোন সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে ভেসে ‘পরিত্যাক্ত’ এই জাহাজটি সেন্ট মার্টিন
দ্বীপে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছে কোস্ট গার্ড। তবে এটি কেন পরিত্যক্ত করা হয়েছে এ
প্রশ্নের উত্তর তারাও খুঁজছে। উৎসুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাজের দড়ি বেয়ে
উপরে উঠে কোন মানুষকে দেখতে পাননি। তবে ভেতরে কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পেয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের জাহাজ
জাহাজটির গায়ে এর নাম লেখা
রয়েছে এম আর ৩৩২২। এর সূত্র ধরে জানা যায় এটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি বার্জ।
মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানায় নিবন্ধনকৃত এ জাহাজটি ১১০.৬ মিটার দীর্ঘ
এবং ৩০ মিটার চওড়া একটি মালবাহী বার্জ।
বার্জ হলো মালবাহী একটি নৌযান
যেটিকে অন্য কোন নৌযান বা টাগবোট দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। বার্জের সাধারণত নিজস্ব
ইঞ্জিন থাকে না। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজগুলোর যে তালিকা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকাশ
করে তা থেকে দেখা যায় এই নৌযানটি এবছরেই একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছে।
এবছরের ৮ই সেপ্টেম্বরের একটি
তালিকাতেও জাহাজটির কথা উল্লেখ রয়েছে, যেখানে বলা হয় বার্জটি মালয়েশিয়ার একটি বন্দর
থেকে নয় হাজার টনের বেশি পাথর বহন করে এনেছে।
জাহাজটির নিবন্ধনের তথ্য থেকে
জানা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে তৈরি করা এই বার্জটি ১০ হাজার টন মালামাল বহনে সক্ষম।
বার্জটি এসেছিল কুতুবদিয়ায়
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের
তালিকা থেকে জানা যায়, জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকস নামের একটি স্থানীয় এজেন্ট এই জাহাজটি
ভাড়া করে এনেছিল। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে এই জাহাজটি তারা
ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু বার্জটি কীভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে ভিড়লো এনিয়ে তারা
কিছুই বলতে পারছেন না।
“জাহাজটি দুইদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বন্দর ছেড়ে
চলে যাওয়ার পর কী হয়েছিল সেটা আমরা বলতে পারছি না”, বলেন চট্টগ্রামে জার লজিস্টিকসের
একজন কর্মকর্তা জিন্নাত আলী।
মালয়েশিয়া থেকে নির্মাণকাজের
জন্য পাথর বহন করে জাহাজটি চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় গিয়েছিল বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
মি. আলী বলছেন, মালামাল খালাস করে ক্যাপ্টেন এবং ক্রু-সহ দুইদিন আগে বার্জটি নিয়ে
টাগবোট চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকা থেকে গত জুন মাসেও বার্জটিকে
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে থাকতে দেখা যায়। এর বাইরে জাহাজটি সম্পর্কে বিস্তারিত
কিছু জানাতে পারেনি জার লজিস্টিকস।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কোস্ট
গার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাগিব তানজুম বলছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে
তারা নিজেরা জাহাজটিতে উঠে পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। তবে তারা এটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছেন
যে এতে কোন মানুষ ছিল না।
স্থানীয়দের মধ্যে যারা জাহাজটিতে
উঠেছেন তারা কোস্ট গার্ডকে জানিয়েছেন যে জাহাজটির কার্গো রাখার স্থানটিতে কিছু বালি
অথবা পাথরের বস্তা রয়েছে।
মি. তানজুমও বলছেন, এধরণের
বার্জ অনেকক্ষেত্রে ভিন্ন কোন নৌযান দিয়ে টানা হয়। তবে এটি তুলনামূলক বেশ বড় আকারের
বার্জ।
কোন নাবিক ছাড়া জাহাজটি যেভাবে
ভেসে এসেছে তাতে বার্জটিকে সচেতনভাবেই পরিত্যক্ত করা হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা
করছে কোস্ট গার্ড।
প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোন কারিগরি গোলযোগের কারণে বার্জটি পরিত্যক্ত করে থাকতে পারেন নাবিকরা অথবা আবহাওয়ার কারণে বার্জটি টাগবোট থেকে ছুটে গিয়ে থাকতে পারে।
সুত্র: বিবিসি বাংলা
Post a Comment
0 Comments